আপনার পোষা বিড়ালটি আচরণে বা শারীরিকভাবে একটু আলাদা লাগছে? হয়তো সে মা হতে চলেছে! বিড়ালের গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলো জানা থাকলে আপনি সময়মতো সঠিক যত্ন নিতে পারবেন।  যদি আপনার বিড়ালটি সম্প্রতি হিট সাইকেল এ ছিল এবং কোনও পুরুষ বিড়ালের সংস্পর্শে এসে থাকে, তাহলে তার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। গর্ভধারণের শুরুতে কিছু লক্ষণ অনেকটাই অস্পষ্ট থাকলেও, প্রজননের তিন সপ্তাহ পরে বিড়ালের শরীর ও আচরণে বেশ কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনগুলো যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেন, তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার বিড়ালটি সন্তানসম্ভবা কি না।

বিড়ালের গর্ভধারণের সময়কাল সাধারণত ৬০ থেকে ৬৭ দিন পর্যন্ত হয়। সহজভাবে মনে রাখতে চাইলে বলা যায়, মানুষের গর্ভকাল যেখানে ৯ মাস, বিড়ালের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৯ সপ্তাহ। এই সময়ে আপনার বিড়ালটির শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিকেই পরিবর্তন ঘটবে, যা তাকে এবং তার অনাগত সন্তানদের জন্য সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

শারীরিক পরিবর্তনসমূহ

প্রথম লক্ষণ হিসেবে বিড়ালের হিট সাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত, কোনও বিড়াল প্রতি ১০ দিন থেকে দুই সপ্তাহ পরপর হিটে যায়। যদি হঠাৎ করে এই সাইকেল বন্ধ হয়ে যায় এবং বিড়ালটি আগের মতো আচরণ না করে, তাহলে এটি হতে পারে গর্ভাবস্থার একটি শক্ত ইঙ্গিত।

এরপর আসে “পিংকিং” – অর্থাৎ স্তনবৃন্তগুলো গোলাপি হওয়া এবং সামান্য ফুলে ওঠা। এটি বেশিরভাগ সময় প্রজননের ১৫ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে দেখা যায় এবং এটি গর্ভবতী বিড়ালের প্রথম দৃশ্যমান চিহ্নগুলোর মধ্যে একটি। এর পাশাপাশি বিড়ালের ক্ষুধা অনেক বেড়ে যেতে পারে। কারণ এখন সে কেবল নিজের জন্যই নয়, তার গর্ভের ভ্রূণগুলোর জন্যও খাবার গ্রহণ করছে।

গর্ভাবস্থায় বিড়ালের ওজনও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বেশিরভাগ বিড়াল ২ থেকে ৪ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া কিছু বিড়াল হালকা বমি বা বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারে। যদিও এটি সাধারণ একটি লক্ষণ, তবে যদি বমি অতিরিক্ত হয় বা বিড়ালটি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গর্ভধারণের প্রায় পঞ্চম সপ্তাহে বিড়ালের পেট লক্ষ্য করার মতোভাবে বড় হতে শুরু করে এবং সন্তান প্রসবের আগ পর্যন্ত তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সময়ে বিড়ালটি সাধারণত আরামদায়ক পরিবেশে থাকতে চায় এবং অতিরিক্ত চলাফেরা এড়িয়ে চলে।

আচরণগত পরিবর্তনসমূহ

গর্ভাবস্থার সময় বিড়ালের আচরণে অনেক সময় স্নেহপূর্ণতার প্রবণতা দেখা যায়। সে হয়তো আপনার সান্নিধ্য আরও বেশি চাবে, বেশি বেশি ঘেঁষে থাকবে এবং আদর চাইবে। এটা তার মানসিক নিরাপত্তা এবং আপনার ভালোবাসা পাওয়ার একটি প্রকাশ হতে পারে।

একই সঙ্গে সে আগের তুলনায় অনেক বেশি ঘুমাতে পারে—দিনে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত। এটি শরীরের ভেতরের হরমোনজনিত পরিবর্তনের স্বাভাবিক প্রভাব।

সবশেষে, গর্ভাবস্থার শেষ ধাপে বিড়ালটি একটি নিরাপদ ও নিঃশব্দ জায়গা খোঁজে, যেখানে সে সন্তান প্রসব করতে পারবে। এই আচরণকে বলা হয় “নেস্টিং”। এটি সাধারণত সন্তান জন্মের ১-২ দিন আগে থেকে শুরু হয়।

উপরের এই লক্ষণগুলো একসাথে বা আংশিক দেখা গেলে ধরে নিতে পারেন, আপনার প্রিয় বিড়ালটি গর্ভবতী। এমন অবস্থায় তাকে যেন ভালোভাবে যত্ন নেয়া হয়, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার, আরামদায়ক পরিবেশ এবং প্রয়োজনে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ দেয়া হয়—এটা নিশ্চিত করাই আপনার প্রথম দায়িত্ব।

গর্ভবতী বিড়ালের যত্নে অতিরিক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

১. পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করুন:
গর্ভাবস্থায় বিড়ালের শরীরের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তাই তাকে অবশ্যই হাই-প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। চাইলে ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নিয়ে স্পেশাল ‘কিটেন ফুড’ দেওয়া যেতে পারে, যা এই সময়ে উপযোগী।

২. প্রচুর পানি খাওয়ার সুযোগ দিন:
সঠিক হাইড্রেশন গর্ভবতী বিড়ালের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সবসময় তার জন্য পরিষ্কার ও তাজা পানির ব্যবস্থা রাখুন।

৩. অতিরিক্ত ধরাধরি বা চাপ থেকে বিরত থাকুন:
গর্ভবতী বিড়ালকে যত্ন করুন ঠিকই, তবে পেটে হাত দিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করবেন না। এতে তার অস্বস্তি হতে পারে এবং ভ্রূণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

৪. পরিচ্ছন্ন ও শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন:
একটি নিরিবিলি, আরামদায়ক জায়গা গড়ে তুলুন যেখানে সে বিশ্রাম নিতে পারবে এবং প্রসবের সময় নিরাপদ বোধ করবে। সেখানে বেশি আলো, শব্দ বা অন্যান্য পোষা প্রাণী যেন না থাকে।

৫. ভেটেরিনারিয়ান পর্যবেক্ষণ বজায় রাখুন:
গর্ভাবস্থায় অন্তত একবার বিড়ালকে পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। যদি প্রসবের সময় সমস্যা দেখা দেয় বা কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসা নিন।

গর্ভবতী বিড়ালের শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তন চিনে নেওয়া জরুরি। সঠিক পুষ্টি, বিশ্রাম, এবং নিরাপদ পরিবেশের মাধ্যমে তার যত্ন নেয়া উচিত। পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ গর্ভধারণের সময় সুস্থ থাকতে সহায়ক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *