স্বাস্থ্য ও ওষুধ সংক্রান্ত যত্ন

প্রতি তিন মাস অন্তর কৃমির ওষুধ খাওয়ানো বিড়ালের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। ২-২.৫ মাস বয়সে ফ্লু ভ্যাকসিন এবং ৩ মাস বয়সে র‍্যাবিস ভ্যাকসিন অবশ্যই দিতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালের নিউটার/স্পে করানো উচিৎ, যা ভবিষ্যৎ রোগ প্রতিরোধ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সাধারণ হাচি-কাশি বা শরীর গরম হলে অ্যান্টিবায়োটিক না দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। নাপা বা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ কখনোই বিড়ালকে দেবেন না — এগুলো বিষাক্ত। যদি বিড়াল ঘরের বাইরে যাওয়া-আসা করে, তবে প্রতি বছর জলাতঙ্কের (Rabies) টিকা অবশ্যই দিন, কারণ মানুষের জলাতঙ্ক হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই। গর্ভবতী বিড়ালের ক্ষেত্রে সব ধরনের কৃমির ওষুধ চলবে না, নির্দিষ্ট ওষুধ ছাড়া বাকিগুলো মিসকারেজ ঘটাতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অসুস্থ বিড়ালকে কৃমির ওষুধ খাওয়াবেন না, কারণ এটি অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। মনে রাখতে হবে, মানুষের মতো বিড়ালেরও হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, লিভার, স্প্লিনের রোগ হতে পারে, তাই সবসময় ফ্লু নেয়া ভুল। এবং সবসময় যেকোনো ওষুধ দেয়ার আগে ভেটের পরামর্শ নেয়া জরুরি, কারণ একজন ভেট অনেক বছর পড়াশোনা ও ট্রেনিং করে ওষুধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন।

খাদ্য এবং পুষ্টি

বিড়ালের জন্য ড্রাই ক্যাট ফুড এড়িয়ে চলা ভালো, যদি সম্ভব হয়। মশলা, অতিরিক্ত লবণ, তেল, চকোলেট, ঘি ইত্যাদি খাবার বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর, তাই এগুলো পরিহার করুন। মাছ বা মাংসের কাঁটা ও হাড় বেছে খাওয়ানো নিরাপদ পদ্ধতি। যদি পায়খানা পাতলা হয়, তবে মাংসের সাথে কাঁচা কলা সিদ্ধ করে খাওয়ান — এটি ঘরোয়া কিন্তু কার্যকর পদ্ধতি। কন্স্টিপেশন হলে মিষ্টি কুমড়া ও পেঁপে সিদ্ধ করে খাওয়ানো সাহায্য করতে পারে। অনেক সময় মাল্টিভিটামিন খাওয়ালে পটি নরম হতে পারে — এটা স্বাভাবিক, চিন্তার কারণ নয়। ডেলিভারির সময় (১২-৩৬ ঘন্টা বা তার বেশি) বিড়ালকে আমিষজাত খাবার বা গ্লুকোজ খাওয়ানো দরকার যাতে সে শক্তি পায়।

পরিচর্যা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

ঘন ঘন গোসল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী ২-৬ মাসে একবার গোসল দিন, তবে মানুষের শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন নাকয়েকদিন পরপর নখ কেটে দিন যাতে নিজের বা অন্যের ক্ষতি না করে। বিড়ালের কান পরিষ্কার করতে নারিকেল তেল ব্যবহার করে কটন বাড দিয়ে পরিষ্কার করুন, তবে খুব গভীরে ঢুকাবেন না। গর্ভবতী নারী যেন বিড়ালের পটি পরিষ্কার থেকে বিরত থাকেন, কারণ এতে টক্সোপ্লাজমোসিস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধ

যে বিড়াল হঠাৎ খাওয়া বন্ধ করে দেয় বা বমি করে, তাকে অন্য সুস্থ বিড়াল থেকে আলাদা রাখুন — এটি সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ করতে সাহায্য করে। মনে রাখতে হবে, খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া সবসময় ফ্লু নয় — এটা অন্যান্য গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে, তাই ভুলভাবে অনুমান না করে পর্যবেক্ষণ করুন।

ডেলিভারি ও প্রজনন বিষয়ক যত্ন

গর্ভধারণকাল সাধারণত ৬২-৬৫ দিন, এ সময় সঠিক যত্ন খুব জরুরি। যদি কৃমির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সব ধরনের কৃমির ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না — শুধু নির্দিষ্ট ওষুধ ডাক্তার দেখিয়ে দিতে হবে। ভুল ওষুধ অ্যাবরশন বা মিসকারেজ ঘটাতে পারে। ডেলিভারির সময় অনেকটা সময় (১২-৩৬ ঘণ্টা বা তার বেশি) লাগতে পারে, তাই বিড়ালকে পুষ্টিকর খাবার ও গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে। গর্ভকালীন সময় মা বিড়ালের মাংসজাত খাবার ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করুন। গর্ভবতী নারী যেন বিড়ালের মল পরিষ্কার না করেন, এটাও তাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *